পরিবেশগত উদ্দীপনার প্রতিক্রিয়ায় একটি জীবের প্রতিক্রিয়াকে তার আচরণ বলা হয়। আচরণ একটি জীবের অভিযোজন এবং বিবর্তনে সহায়তা করে।
- অভিযোজন হল একটি জীবের কাঠামোগত বা কার্যকরী পরিবর্তন যা জীবকে একটি নতুন পরিবেশে বা তাদের ক্রমাগত পরিবর্তিত বর্তমান পরিবেশে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে।
- রূপগত অভিযোজন নিম্নলিখিত বিষয়গুলিতে লক্ষ্য করা যায়-কিছু মরুভূমির উদ্ভিদের পাতা কাঁটায় পরিণত হয়, এমনকি
পাতার সংখ্যাও হ্রাস পায়। এগুলি জলের ঘাটতিতে প্রস্ফুটনের হার হ্রাস করার জন্য। - বায়ু মূত্রাশয় হল মাছের উচ্ছ্বাস অঙ্গ যা সাঁতার কাটার সময় মাছকে তার গভীরতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- পাখির বায়ু থলি অক্সিজেন বিনিময় ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং পাখির নির্দিষ্ট মাধ্যাকর্ষণ হ্রাস করে তাদের সাহায্য করে যার ফলে তারা আরও উঁচুতে উড়তে সক্ষম হয়।একটি আদর্শ পৃথিবীতে আমরা জলবায়ু পরিবর্তন যেখানে আছে, সেখানেই থামিয়ে দিতাম- এই ব্যবস্থাকে প্রশমন বলে।
প্রশমন
- এমন কোন কাজ যা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণকে অপসারিত করে সমস্যাটি থামাতে, অথবা এর গতিকে ধীর করতে সাহায্য করে। এটি করা যায়ঃ
গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস করা, অথবা বায়ুমণ্ডল থেকে গ্রিনহাউস গ্যাস দূর করা
তবে, জলবায়ু পরিবর্তন ইতিমধ্যেই ঘটছে। এর মানে হলো কেবল প্রশমনই যথেষ্ট হবে না বিশেষ করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যদি বড় পদক্ষেপ গ্রহন না করা হয়। তাই আমাদেরকে জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রভাবগুলির সাথে মানিয়ে নিতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনে অভিযোজন হল এমন যেকোনো কাজ যা আমাদেরকে পরিবর্তিত জলবায়ুর সাথে মানিয়ে নিয়ে মৌলিক চাহিদাগুলো (খাদ্য,জল, স্বাস্থ্য, আশ্রয়) মেটাতে সাহায্য করে
এটি কৃষক, ব্যাবসায়ী, রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সব ধরনের মানুষের গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর সাথে অনেকাংশে সম্পর্কযুক্ত।
তাদের অভিযোজনের ফলে যেমন জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবগুলো পরিমানে কমে যেতে পারে, তেমনি এর সম্ভাব্য সুবিধাগুলোরও সর্বোচ্চ ব্যবহার হতে পারে, যেমন নির্দিষ্ট কোন ফসলের উপযোগী ঋতুর দীর্ঘায়ন হওয়া।
অভিযোজনের পন্থাগুলো নির্ধারণ করার সময়, আমাদেরঅপ-অভিযোজনসম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। যখন অভিযোজিত কোনো সমাধান কার্যকর করার ফলে মূল সমস্যাটি আরও বেড়ে যায় তখন তাকে অপ-অভিযোজন বলে। যেমন ধরো, অতিরিক্ত গরমের সাথে মানিয়ে নিতে কেউ ঘরে এসির ব্যাবহার বাড়িয়ে দিল- কিন্তু এটি কোন যথাযথ সমাধান নয়, কারন এসির এই অধিক ব্যাবহারের ফলে গ্রীনহাউস গ্যাসের নির্গমন আরও বেড়ে যায়, যা পারিপার্শ্বিক তাপমাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। তাই দীর্ঘমেয়াদে আসলে কি ধরনের অভিযোজন টেকসই হবে সে বিষয়ে চিন্তা করা উচিত।
গ্রীনহাউস গ্যাস :
গ্রীনহাউস গ্যাস হলো বায়ুমণ্ডলে থাকা গ্যাস যা তাপ আটকে রাখে এবং গ্রিনহাউস প্রভাব তৈরি করে। এই গ্যাসগুলি সূর্যের আলো প্রবেশ করতে দেয়, কিন্তু পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে নির্গত তাপকে আটকে রাখে, যার ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়.
প্রধান গ্রিনহাউস গ্যাসগুলি হলো:
জলীয় বাষ্প (Water Vapor):
এটি সবচেয়ে বেশি পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাস, যা জল চক্রের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে.
কার্বন ডাই অক্সাইড (Carbon Dioxide):
জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো, শিল্প এবং গাছপালা থেকে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রিনহাউস গ্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস.
মিথেন (Methane):
এটি সাধারণত প্রাকৃতিক গ্যাস এবং জীবন্ত প্রাণীর হজম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্গত হয়.
নাইট্রাস অক্সাইড (Nitrous Oxide):
এটি কৃষি কার্যকলাপ এবং শিল্প থেকে নির্গত হয়.
ওজোন (Ozone):
এটি বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে থাকে এবং সূর্যালোক থেকে ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মি শোষণ করে.
গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাব:
গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হয়, যা পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ হতে পারে. উদাহরণস্বরূপ, মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়া, সমুদ্রের স্তর বৃদ্ধি পাওয়া, এবং চরম আবহাওয়ার ঘটনা যেমন বন্যা, খরা, এবং ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি.
গ্রিনহাউস গ্যাস কমানোর উপায়:
পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ব্যবহার বৃদ্ধি (যেমন সৌর এবং বায়ু শক্তি), জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার হ্রাস করা, গাছ লাগিয়ে পরিবেশকে সবুজ করা, শিল্পের দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা.
NASA Climate Kids এর মতে, গ্রীনহাউস গ্যাসগুলি একটি কম্বলের মতো কাজ করে, যা পৃথিবীর তাপ আটকে রাখে এবং আমাদের গ্রহকে বাসযোগ্য করে তোলে। কিন্তু, অতিরিক্ত গ্রিনহাউস গ্যাসের কারণে এই কম্বলটি খুব বেশি গরম হয়ে যায়, যা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ হয়।
অভিযোজন কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতি আমাদের দুর্বলতা কমাতে পারে?
জলবায়ু পরিবর্তন :
মোকাবেলায় আমাদের যে অভিযোজন এবং প্রশমন উভয় পদ্ধতিরই প্রয়োজন আছে, সে বিষয়ে বেশিরভাগ বিজ্ঞানিই একমত। তবে আমাদের সীমিত সময় এবং সম্পদের প্রেক্ষাপটে উভয়ের একটি ভারসাম্য খুজে বের করাটাই হল জটিল কাজ। যদি কার্যকরভাবে করা হয়, তবে, একটি সুষম মিশ্র পদ্ধতি সময়ের সাথে সবচেয়ে কমদামি পন্থা হতে পারে। এটি কীভাবে ঘটবে, তা বুঝতে নিচের গ্রাফটি দ্যাখো।
একটু পূর্বপরিকল্পনার মাধ্যমে আমরা এমন সমাধানেও পৌঁছাতে পারি যা উভয় পদ্ধতির মিশ্রণ ঘটায়। এর একটি ভালো উদাহরণ হল মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনা, যেখানে সুস্থ মাটি কার্বন সঞ্চয় করতে পারে (যা প্রশমন পদ্ধতি হিসেবে কাজ করে), এবং ভুমিধস প্রতিরোধ ও মাটির নিষ্কাশন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় একধরনের বাফার হিসেবেও কাজ করে (যা অভিযোজনের উদাহরন)।
এতে কি পরিমাণ খরচ হবে?
বিশ্বব্যাংক অনুমান করে যে ২° সেলসিয়াস উষ্ণতার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে ২০১০-২০৫০ এর মধ্যে প্রতি বছর ৭০-১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হবে। যাইহোক, খরচ এবং সুবিধাগুলি স্থান এবং কতটা বিনিয়োগ করা হচ্ছে সে অনুসারে পরিবর্তিত হবে।
সবচেয়ে কম খরচে অভিযোজন ঘটানোর সর্বোত্তম পন্থা যে এখনই শুরু করা, সে বিষয়টিতে সকল গবেষকই একমত। এর কারণ হল জলবায়ু পরিবর্তন বৃদ্ধির সাথে সাথে অভিযোজনের খরচ বেড়ে যায় এবং আমরা বিকল্প পন্থাগুলি হারাতে শুরু করি। এটি আমাদের ‘অবশিষ্ট ক্ষতি’ এর ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেবে- অবশিষ্ট ক্ষতি হলো সে অবস্থা যার সাথে আর কোনোভাবেই মানিয়ে নেওয়া বা অভিযোজন ঘটানো যায় না।
প্রতিটি দেশ কি অভিযোজন ঘটাতে পারবে?
প্রতিটি দেশকে মানিয়ে নিতে হবে। তবুও যে দেশগুলি সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত তারা তা করতে পারে না এবং অনেক দেশ যারা তা করতে পারে
- তারা এখনও জাতীয় আইন এবং নীতির মাধ্যমে পরিমাপযোগ্য অভিযোজন লক্ষ্য নির্ধারণ করেনি।
- প্রচলিত অর্থনৈতিক বৈষম্যের ফলাফল হল, কিছু দেশ অন্য দেশগুলোর মতো প্রয়োজনীয় অভিযোজন ঘটাতে সক্ষম হবে না।
- জলবায়ু পরিবর্তনের কারণগুলো সৃষ্টির পেছনে ধনী দেশগুলোর অবদান সবচেয়ে বেশী হলেও, এর নেতিবাচক ফলাফলগুলো গরিব দেশগুলোরই অধিক ভোগ করতে হবে।
- আরও কথা হলো, পরিবর্তিত জলবায়ুর সাথে অভিযোজনের জন্য ধনী দেশগুলোর পর্যাপ্ত অর্থসম্পদ রয়েছে, যা বেশিরভাগ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের কাছেই নেই।
- এ বিষয়টি উচ্চ ও নিম্ন আয়ের দেশগুলোর মধ্যে একটি অভিযোজন ব্যবধান সৃষ্টি করে। এটি একটি ব্যাপক অন্যায্য সমস্যা, যা ২০৩০-২০৫০ সালের মধ্যে আরও খারাপ অবস্থায় পৌঁছাবে
অভিযোজন ব্যাবধানের সমাধান আমরা কিভাবে করব?
এটা স্বীকার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনকে বিশ্বব্যাপী ন্যায্য এবং টেকসই উন্নয়নের সাথে যুক্ত হওয়া উচিত । এর অর্থ হল স্থানীয় সম্প্রদায়গুলির ইতিমধ্যেই যে অভিযোজন উদ্যোগগুলি রয়েছে সেগুলোকে সমর্থন এবং সম্প্রসারণ করা এবং সরকারকে (বিশেষ করে উচ্চ-আয়ের দেশগুলির) যে জায়গাগুলোতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেখানে অভিযোজন প্রকল্পগুলিকে অর্থায়নে সহায়তা করার জন্য চাপ দেওয়া।
বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ
কোষ বিভাজন ও কোষ চক্র
Database Management System (DBMS)
জীবজগতের নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়